সালেহ্ বিপ্লব: [২] বিশ্বব্যাংকের বেসরকারি খাতবিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) এক জরিপের আলোকে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এ কথা বলেন। 

[৩] ‘দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান দেশগুলোতে ব্যাংকিং খাতে নারীদের অগ্রগতি’ শীর্ষক এই জরিপের ফল সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়।

[৪] এতে বলা হয়েছে, নারী কর্মীদের ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হয়; যা তাদের কর্মস্থলে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করে।

[৫] বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের ৬৬ শতাংশ বা দুই-তৃতীয়াংশ নারী কর্মী মনে করেন যে তারা কর্মক্ষেত্রে সঠিক মূল্যায়ন পান না। নারী ব্যাংকাররা জানান, কাজের দক্ষতা অর্জনে তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে; আবার প্রায়ই আরোপিত কাজের বিষয়ে তাদের সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয় না। এ ছাড়া তাদের ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হয়; যা তাদের কর্মস্থলে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করে।

[৬] আইএফসি ২০২২ ও ২০২৩ সালে বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা- এই তিন দেশের ২০টি বেসরকারি ব্যাংকের নারী কর্মীদের ওপর জরিপটি পরিচালনা করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সাতটি বেসরকারি ব্যাংকের ১ হাজার ২৮৩ জন কর্মীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে নারী ৪৩৬ জন ও পুরুষ ৮৪৭ জন। ব্যাংক সাতটি হচ্ছে ব্র্যাক, ইস্টার্ন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, সিটি, প্রাইম ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড।

[৭] আইএফসির জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে নীতিনির্ধারকেরা বিগত বছরগুলোয় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই খাতে নারীর প্রতিনিধিত্বে তেমন সুখকর অবস্থা নেই। মোট কর্মীর তুলনায় নারী কর্মীর হার খুবই কম। উচ্চ পদগুলোতেও তাদের উপস্থিতি নগণ্য। এমনকি প্রতিবেশী নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশের চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

[৮] বিশ্বজুড়ে আর্থিক খাতে নারী কর্মীর গড় হার ৪৩ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশে এই হার অনেক কম। আইএফসির হিসাব অনুযায়ী, এ দেশের আর্থিক পরিষেবা খাতে মোট কর্মীর মাত্র ১৮ শতাংশ নারী, যা প্রতিবেশী ভুটান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় ৪০ শতাংশের ওপরে। ভারতে অবশ্য তা ১৮ শতাংশ।

[৯] কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, তিন বছর ধরে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে নারী কর্মীর সংখ্যা ১৬ শতাংশে আটকে আছে। 

[১০] এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, লিঙ্গসমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হলে ব্যাংক খাতে নারী কর্মী বাড়ানো প্রয়োজন। বিশেষ করে নারী ব্যাংকারদের ধরে রাখতে এবং পেশাগত উন্নতির জন্য তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপরে জোর দিতে হবে, যেখানে এখন বড় দুর্বলতা রয়েছে। এ ছাড়া বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রগুলোতেও নারীদের সামাজিক-পারিবারিক বাস্তবতা বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।